সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, ঘটনার দিন ভিসি ছাত্রদের নিরাপত্তায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে তারা ভিসির আওতায় আর কোন ক্লাস করতে রাজি নয়। তারা যে ৬ দফা দাবি দিয়েছে সেটা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের ৫ দফা আংশিকভাবে মেনে নেওয়ার জন্য প্রশাসন তাদেরকে আশ্বস্ত করলেও তার বাস্তবায়ন দেখছেন না। ৬ দফা দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবে না। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ক্যাম্পাসে এখনও সাধারন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেই সাথে যারা ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন ম্যাচে অবস্থান করছে তারা সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিভিন্ন মেসে চুরির ঘটনা ঘটছে। ম্যাচ মালিকরাও আতঙ্কগ্রস্ত। যারা বাইরে অবস্থান করে তারা ১৮ ফেব্রুয়ারি ঘটনার রাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে বিভিন্ন ভাইদের রুমে অবস্থান করছে। শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। ক্যাম্পাসে কোন ছাত্র রাজনীতি দেখতে চায় না।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৬ দফা দাবির অধিকাংশ মেনে নিলেও ভিসি, প্রো-ভিসি, ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের অপসারণ এখন শিক্ষার্থীদের মূল দাবিতে পরিণত হয়েছে।
তাদের এ দাবি পূরণের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষার্থীদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বিক্ষোভ মিছিল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের লাল কার্ড প্রদর্শনের সমর্থনে বেলা ১১ টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বার বাংলা পাদদেশে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে। এরপর বেলা ১২ টায় শত শত শিক্ষার্থী একযোগে “ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা এই কুয়েটে হবে না”, “নো -ছাত্রদল, নো- ছাত্রলীগ , “নো -ছাত্রশিবির”, “নো -ছাত্র ইউনিয়ন “, “নো -বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন”, “নো-প্রশাসন”, ‘রক্ত যখন ঝরছিল প্রশাসন তখন কই ছিল?, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘উই ওয়ান্ট নলেজ নো পলিটিকাল ড্যামেজ’, ‘শিক্ষার্থীর রক্ত ঝরে প্রশাসন তামাশা করে’, ‘ছাত্র রাজনীতি রেড কার্ড’, ‘বহিষ্কার বহিষ্কার জড়িতদের বহিষ্কার’, ‘দালালি না রাজপথ রাজপথ রাজপথ’, ‘তুমি কে আমি কে আবরার আবরার, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘দড়ি ধরে মারো টান ভিসি হবে খান খান’- এসব প্ল্যাকার্ড এবং শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসীদের লাল কার্ড প্রদর্শন সহ নানা ধরনের শ্লোগান দেয়।
পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গত পরশু কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন বিক্ষোভ মিছিল এবং নিরাপত্তার দাবিতে কিছু দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন আমাদের কোন দাবি না মেনে উল্টো আমাদেরকে মব বলে, আমরা উস্কানি দিয়েছি বলে তারা আমাদেরকে নানা ধরনের উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা প্রশাসনকে বর্জন করেছি এবং আমরা কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবো।
প্রেস ব্রিফিং শেষে শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে দুর্বার বাংলার পাদদেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে শিক্ষার্থীরা তাদের ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল প্রশাসনিক ভবন সহ বিভিন্ন বিভাগের তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক এবং শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
খুলনা গেজেট/এএজে